Type Here to Get Search Results !

ফুলশয্যা (Phoolsajya) - সুহানা তাবাসসুম । Bengali Short Story

 

ফুলশয্যা (Phoolsajya) - সুহানা তাবাসসুম । Bengali Short Story
ফুলশয্যা
-সুহানা তাবাসসুম

       টপিকটা বেশ আকর্ষণীয়,তাই না? আরে না না, ওই প্রথম স্পর্শ, শরীর, তারপর মিলন এসব নিয়ে কিছু লিখবো না।

      এই রাতটা নিয়ে কে না ভাবে বলুন তো? ফুলশয্যার রাত নিয়ে সবাই বিয়ের আগেও ভাবে আর বিয়ের সময়েও ভাবে। অনেকে ভাবে এই রাতে তারা কিই সব প্রমিস-ট্রমিস করে তারপর নতুন জীবন শুরু করবে। আসলে এসব প্রমিসে কিছু হয় না, যারা কথা রাখার তারা এমনিতেই  রাখবে। তারপর অনেকে ভাবে এই রাতটা তারা তাদের মনের মানুষের সাথে গল্প করেই কাটিয়ে দেবে। আবার অনেকে শরীরের নেশায় মেতে ওঠে।

    কোনো কোনো মেয়ে তো আবার  সাতহাত ঘোমটা টেনে দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে অপেক্ষা করে বরের জন্য। বর আসে তারপর ঘোমটা তোলে আর মেয়েটা লজ্জা পেয়ে একটু সরে যায় এসবই... 

       সব থেকে চঞ্চল উৎশৃঙ্খল মেয়েটাকেও সেদিন দেখে মনে হয় পৃথিবীসুদ্ধু লজ্জা যেন তাকেই এসে চেপে ধরেছে। আবার যে ছেলেটা জীবনে বিয়ে করবো না বলে প্রতিজ্ঞা করে বলেছিলো ..."ওসব বিয়ে-টিয়ে, ফুলশয্যা কে করবে!ধুর ওসব হবে না ভাই আমার দ্বারা"  এমনকি সে পর্যন্ত ফুলশয্যার রাতে বৌয়ের জন্য উপহার এনে বলে "তোমার জন্যই তো আমি দিবারাত্রি অপেক্ষা করেছি প্রিয়, প্রমিস করো আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না।" 

      কিন্ত রিম্পা এতো-শত কিছু ভেবে রাখেনি এই রাতটা নিয়ে। তবে বিয়েতে নেকলেস টা কখন পরবে, তারপর লাল লিপস্টিক টা ডিপ দেবে নাকি হালকা দেবে এসব ভেবে রেখেছিলো। তিন দিন ধরে সাজতে সাজতে ওই সাজুগুজু করা মেয়েটাও ভীষণ ক্লান্ত হয়ে হাত-পা ছেড়ে শুয়ে পড়েছিল তার বাবার দেওয়া সাত-পাঁচের পালঙ্কটাতে। হাতের আঙ্গুল কামড়াতে কামড়াতে রিম্পা ভাবছিলো এই সময় যদি একটা সিগারেট পেতো,উফফ! মাথার যন্ত্রনা টা ছাড়তো। নিজের বাড়িতে রিম্পা কে খুব লুকিয়ে এসব করতে হতো। তারপর এটা তো আবার শশুরবাড়ি। বর তো বরই হবে। বন্ধু তো আর হবে না। রিম্পা তো ওর বরকে দেখেইনি ঠিক মতো করে। রিম্পার বাবা হুট্হাট করে বিয়ে ঠিক করে দিয়েছিলো। রিম্পার সম্মতি আছে কি না জানার চেষ্টাও করেনি। ঘুমের ঘোরে এসব ভাবছিলো রিম্পা।

         ওসব লজ্জা পাওয়া, দুধ দেওয়ার ব্যাপার তো দূরের কথা রিম্পা তো প্রায় গভীর ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়ে ফেলেছিলো। বেশ রাত করেই সুজিত ঘরে এলো। দরজাটা অল্প ভিজিয়ে দিয়ে বললো...কি... খুব ক্লান্ত নাকি? 

        রিম্পা গম্ভীর গলায় বললো.....তাছাড়া আর কি? দেখো...আমি তোমাকে  এই হঠাৎ করেই  ভালোটালো বাসতে পারবো না।

   সুজিত এমন অপ্রত্যাশিত উত্তরে হো-হো করে হেসে উঠলো আর বললো..... ভালোবাসা...হা-হা-হা। সে তো বিশাল বড়ো ব্যাপার গো। ওসব আমার দরকার নেই  আর তাছাড়াও অনেক মেয়েরা আমার প্রেমে পাগল...
---কি? কি বললে? আচ্ছা! তো ওদেরকে বিয়ে করলেই তো পারতে? 
---করতাম তো,কিন্ত ওদেরকে বিয়ে করলে তোমাকে কে উদ্ধার করতো বলো? তাই আর... 
---আর? আর কি? 
--- আচ্ছা ছাড়ো তো এসব প্রেম ভালোবাসার কথা। ছাদে যাবে? 
--- আচ্ছা চলো। কিন্তু কেও যদি দেখে ফেলে? 
--- দেখলে দেখতে দাও ।
--- যদি কেও কিছু বলে? 
--- আমাদেরও তো স্বাধীনতার প্রয়োজন আছে নাকি!
তুমি নিশ্চয় বিয়ের আগে পরাধীন ছিলে, আবার বিয়ের পরেও আমার ঘরের লাজুক বৌ হয়ে খাঁচাতে বন্দী হওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি? শোনো ওসব হবে না কিন্তু... 

খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে রিম্পা। ছাদের কিনারায় বেশ দূরে দূরেই এসে বসে তারা। রিম্পা বললো --- আমি কিন্তু খুব অভিমানী।
--- তাই নাকি?অভিমান হলে মাথা ধরে ঠুকে দেবো দেওয়ালে, দেখবে আর অভিমান-রাগ কিছুই হবে না।
--- কি? তাহলে আমিও তোমায় খাট থেকে ফেলে দেবো।
--- ও বাবা,এই ব্যাপার! তুমি কুস্তি খেলতে পারো তো? না পারলে শিখে নিও। আমার সাথে কুস্তিও লড়তে হবে।
আর আমি কিন্ত খুব রাগি। যদি তোমার ওপর খুব রেগে যায় তখন কি করবে তুমি? 
--- সে যখন রাগবে তখন দেখা যাবে।
--- বাহ্! দেখছি তোমার মগজও আছে। এই উত্তর টাই তো চাইছিলাম।
জো হোগা দেখা জায়েগা,
আভি তো জি লে জিন্দেগী।
--- ইস,আমি কিন্ত তোমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি।
--- এই যাহঃ এতো তাড়াতাড়ি প্রেমে পড়ে গেলে!যায় হোক....হুররে....বৌ পটিয়ে ফেলেছি। চলো সেলিব্রেশন করি।
এই বলে সুজিত তার হাত টা রিম্পার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো --- হাতে চুমু-টুমু দিতে পারবো না।
বন্ধুত্বের জন্য হাত বাড়িয়েছি,চাইলে বন্ধুত্ব করতে পারো। রিম্পা অবাক দৃষ্টিতে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো সুজিতের দিকে। রিম্পার চোখ টা হঠাৎই আর্দ্র হয়ে গেলো। চোখের পানি বাঁধ ভাঙতে চাইলো। সুজিত আবার হো-হো করে হেসে বললো --- সারারাত কি কেঁদেই কাটাবে? আমার বাপু এসব কান্না কাটি, ঢং পোষায় না। চিল করো বুঝলে চিল।
রিম্পা লজ্জা পেয়ে গিয়েছিলো। ভেতরে একটা সীমাহীন আনন্দে সে প্রায় হাউমাউ করে কেঁদেই ফেলতো। কিন্তু তারপরেই সুজিতের কথায় নিজেকে সামলে নিয়ে বললো --- তা কিভাবে সেলিব্রেশনটা করবে শুনি? 

--- এই তো স্নিগ্ধ রাত....
 হাত মে তুমহারা হাত...ছোটি ছোটি বাত অউর... 
.......অউর সুখটান।

তারপর? তারপর আর কিছু না।
একটা সিগারেটের ধোঁয়ায় দুজন নেশাছন্ন হয়ে যায়। সুজিতের কাঁধে মাথা রাখে রিম্পা। বিয়েবাড়িতে গান বেজে ওঠে ---
‘‘তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে হলে আমায় দিতে পারো’’

[ আগে একে অপরের বন্ধু হন, তারপর না হয় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে আসবেন।]

কলমে✍️-  সুহানা তাবাসসুম
_______________________

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.