
—প্রীতম গুহ
- "সেক্স চ্যাট করবে?"
- "সেটা আবার কি গো?"
- "সেক্স চ্যাট জানো না? প্রথম ফেসবুক করছ নাকি?"
- "ঠিক আছে তোমার একটা হট ছবি পাঠাও।"
- "আমার এসব কথা ভালো লাগছে না প্লিজ বিক্রম।"
- "কাম অন্ বর্ষা, এগুলো তো আজকাল কমন প্রায়, এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে?"
বিক্রমের কাছে এরকম কথা শুনে রীতিমতন অপ্রস্তুতে পড়ে যায় বর্ষা। আজ দেড় মাস হল ফেসবুকে আলাপ বিক্রমের সাথে বর্ষার, এর আগে কখনো এতোখানি ভালগার কথাবার্তা বলেনি বিক্রম বর্ষাকে। ফেসবুকে আলাপের দ্বিতীয় দিনেই প্রোপোজ করেছিলো বিক্রম বর্ষাকে, তবে বর্ষা "না" করে দিয়েছিলো সাথে সাথেই। রোজই দুবেলা বিক্রমের খোঁজ নেওয়া, তার খেয়াল রাখা এসব দিক থেকে কোনোরূপ ত্রুটি রাখেনা বর্ষা তবে প্রোপোজ করলেই এড়িয়ে যায় সে। ভালোবাসার প্রোপোজালে আজো স্বীকার করেনি সে বিক্রমকে। বর্ষাকে প্রোপোজ করলেই বর্ষা বিক্রমকে এড়িয়ে যায়, বর্ষার কথা একটাই যে সে বিক্রমের ভালো বন্ধু হয়ে থাকতে চায়। বর্ষার মুখে যতবারই এই কথা শুনেছে ততোবার বিক্রম রেগে গিয়েছে।
বিক্রমের অফিসের বন্ধু সোহম তো বারবার বলছে এই ধরনের মেয়েরা টাইমপাস করবার জন্যই নাকি ফেসবুকে আসে, তাই বর্ষাকে আনফ্রেন্ড করে দিয়ে বিক্রমকে পিছিয়ে আসতে বলেছে বারবার।
উত্তরে বিক্রমও জানায় যে সেও বর্ষার সাথে টাইম পাসই করছে, ভালোটালো বাসে না।
বিক্রমের সাথে এখন বর্ষার বন্ধুত্বটা বেশ ভালোই, তবুও বর্ষা বিক্রমকে তার পার্সোনাল নম্বর দেয়নি, দেখা সাক্ষাতও হয়নি, তাই চ্যাট ছাড়া তাদের মধ্যে আর কথা বলার অন্য কোনো উপায় নেই।
- "কিগো খেয়েছো?" প্রতিদিনের মতন আজও বিক্রমকে জিজ্ঞাসা করল বর্ষা।
- "হ্যাঁ সোনা খেয়েছি 😊।" একটা স্মাইলি দিয়ে রিপ্লাই দিলো বিক্রম বর্ষাকে।
- "তোমার অফিসের কাজকর্ম কেমন চলছে?" বর্ষা জিজ্ঞাসা করল।
- "চলছে গো ভালোই, পুজোর আগে কাজের চাপটা একটু বেশি।"
- "সবসময় কাজে ডুবে থেকো না, নিজের শরীরের খেয়ালটাও রেখো, সময়মতন খাওয়া দাওয়াটা কোরো প্লিজ।"
- "তুমি তো আছো, না খেলে খাইয়ে দেবে।"
- "আবার ইয়ার্কি?"
- "এবার পুজোতে বাড়ি আসছো তো তুমি?"
বর্ষার প্রশ্ন শুনে বিক্রম অবাক হল, জিজ্ঞাসা করল
- "হ্যাঁ আসছি, কিন্তু আসছো বলছ কেন? তুমি তো আমার শহরে থাকো না।"
- "হ্যাঁ ঐ আর কি, যাচ্ছো বলতে নেই তাই আসছো বললাম।"
- "ও আচ্ছা।"
- "তোমার মা কেমন আছেন?"
- "জানি না।"
- "জানি না মানে? তুমি মাকে কল কর না?"
- "হ্যাঁ করি, মাঝেমাঝে। সবসময় তো আর সময় হয়ে ওঠে না। আর তাছাড়া মা তো আর বাচ্ছা নয়, যে আমায় খেয়াল রাখতে হবে।"
- "আর তোমার খেয়াল?"
- "আমার খেয়াল রাখার জন্য তো তুমি তো আছোই।"
উত্তর দিলো না আর বর্ষা, কেবল একটা স্মাইলি দিলো। 😊
অফিসের কাজের চাপে সারাদিনই ব্যস্ত থাকে বিক্রম। কলকাতা থেকে বদলি হয়ে তাকে ব্যাঙ্গালোর চলে আসতে হয়েছে বছর পাঁচেক হল। এই শহরের ব্যস্ততা ঐ শহরকে ভুলিয়েই দিয়েছে বিগত কয়েক বছর হল। এবছর পুজোয় বাড়ি যাবার জন্য ছুটির আবেদন করেছে বিক্রম।
সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিলো, কিন্তু হঠাৎ কিভাবে যেন সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেল বিক্রমের জীবনে।
একমাস পর বিক্রমের মার কঠিন অসুখ করে, বিক্রমের বাবা নেই, তাই বিক্রমের মামারাই বিক্রমের মার চিকিৎসার ভার নিয়েছিলো। পাছে ছেলের কাজের ক্ষতি হয় তাই ছেলেকে সংবাদটা জানাতে বারন করেছিলো বিক্রমের মা। কিন্তু বাড়াবাড়িটা শুরু হল মহালয়ার ভোর থেকে। বিক্রমের মার শারীরিক অবনতি হতে শুরু করে, খবর পাঠানো হয় বিক্রমকে। তৎকালের টিকিট কেটে সাথে সাথে বিক্রম চলে আসে কলকাতা। মা তখন ICU তে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। নার্সিংহোম পৌঁছে বিক্রম মার সাথে দেখা করার জন্য পাগল হয়ে ওঠে, কিন্তু কিছুতেই অনুমতি দেওয়া হয় না। বিক্রমের মামার বহুবার অনুরোধের পর অবশেষে দু মিনিটের জন্য বিক্রমকে ভিতরে যেতে অনুমতি দেওয়া হয়।
ভিতরে গিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে "মা" বলে ডাকার পর আবছা চোখে বিক্রমকে চেয়ে দেখে তার মা। সেই শেষ দেখা মাকে, কিছু বলারও সুযোগ পায়নি। পরদিন ভোরে নিমতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় মায়ের। মায়ের মৃত্যু সংবাদটা অফিসের সব বন্ধু থেকে শুরু করে বর্ষাকেও পাঠিয়েছিল বিক্রম। সবার ম্যাসেজের রিপ্লাই এলেও বর্ষার ম্যাসেজের কোনো রিপ্লাই আসেনি। শুধু তাই নয় সেদিনের পর থেকে বর্ষা আর অনলাইনেও আসেনি। কথাটা সোহম কে জানায় বিক্রম, সোহম হেসে বলে- "মাগীর প্রয়োজন ফুরিয়েছে, তোকে অনেকদিন আগেই আমি সাবধান করেছিলাম পিছিয়ে আসতে বলেছিলাম, শুনিসনি।" দিন দশেক পর মায়ের শেষকাজ শেষ হলে ব্যাঙ্গালোর ফিরে যেতে ব্যাগ গোছাচ্ছিলো বিক্রম, মায়ের ছবি, ব্যাঙ্কের পাসবুক ইত্যাদিও সঙ্গে নিচ্ছিলো সে ঠিক সেই মুহূর্তে মায়ের মাথার বালিশের নিচ থেকে মায়ের স্মার্ট ফোনটা পায় বিক্রম। গতবছর মায়ের জন্মদিনে গিফ্ট করেছিলো মাকে বিক্রম, ফোন কিকরে চালাতে হয় সেটাও শিখিয়ে দিয়েছিলো মাকে, তবে কাজের ব্যস্ততায় মাকে সর্বদা কল করা হয়ে উঠতো না। মা বারবার তাকে কল করলেও বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দিতো, কতবার তো না জানি মায়ের নম্বরটা রিজেক্ট লিস্টেও রেখে দিয়েছিলো সে। সেসব ভেবে আজ কান্না আসছে বিক্রমের। ভাবছে কত বড় ভুল করেছে মাকে সময় না দিয়ে। রোজ একটু বেশিক্ষন মায়ের সাথে কথা বললে কি এসে যেতো? কি আছে? বন্ধুদের সাথে কথা বলাটা নাহয় একটু কমই হত। আজ মায়ের অভাবটা বড় বোধ করছে সে। কিন্তু এখন আফসোস করে কি হবে? চোখ মুছতে মুছতে মায়ের ফোনটা অন করতেই চমকে যায় বিক্রম, বর্ষার আইডিটা তখনো মায়ের ফোনে খোলা।
গল্পটি ভালো লাগলে শেয়ার করে দিও। 😊
(লেখা - Pritam Guha)

