Type Here to Get Search Results !

Shesh Dekha (শেষ দেখা) - Romantic Bengali Love Story | Bengali Short Story

Shesh Dekha (শেষ দেখা) - Romantic Bengali Love Story | Bengali Short Story
শেষ দেখা
লেখা: সংগৃহিত
        প্রথম দেখা বয়েজ স্কুল মাঠে। ফুটবল ম্যাচ। সে গোলকিপার।

ঝাঁকড়া চুল, লম্বাটে নাক, গভীর চোখ, সাদা টি-শার্ট। বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো জমছিল কপাল দিয়ে, চুঁইয়ে একটু একটু করে।
বলটা লেগেছিল আমার হলুদ -সাদা শাড়ির কুচিতে। কাদা জলে একশা। সে দৌড়ে এসে মাথা নুইয়ে,
- “বুঝতে পারি নি।”
আমি খুব রেগে গিয়েও বলতে পারি নি,
- “মা'র শাড়ি। জানেন কত বকা খেতে হবে।”
শুধু ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে ছিলাম। সে মৃদু হেসেছিল।
সেদিন বিকেলেও ঝড় উঠেছিল। উঠোন জুড়ে উথালপাথাল হাওয়া। বৃষ্টি নেমেছিল হাওয়ার পরে।

দ্বিতীয়বার দেখা হয়েছিল বাসস্যান্ডের সামনে। তখন সন্ধ্যে। কলেজফেরত আমি। সিগারেটে লাস্ট টান দিয়ে বাকিটুকু ডাস্টবিনে ফেলে দূর থেকে বলেছিল,
- “শাড়ি থেকে কাদার দাগ উঠেছে?”
আমি মাথা ঝাঁকিয়েছিলাম একগাল হেসে।
সে চুপ করে বলেছিল,
- “চুলে বিনুনি করেছিলেন সেদিন…! খোঁপায় বেলীর মালা দিলে আরো বেশী…”
নাহ্। কথা শেষ হয় নি। তার আগেই বাজ পড়েছিল, চমকে উঠেছিল সে, চমকে উঠেছিলাম আমি।
সেদিন সন্ধ্যেয় ঝড় উঠেছিল। বাস বন্ধ হয়ে গেছিল বৃষ্টির দাপটে। বিদ্যুতের ঝলকানিতে দেখেছিলাম তার অবাক চাউনি। ❤

তৃতীয়বার দেখা হয়েছিল ভীষণ এক চৈত্রে, এক নদীর ধারে, মরা নদী, শুকিয়ে কাঠ।
আমি নদীর শুকনো বুকের দিকে আঙুল তুলে বলেছিলাম,
- “ও জল চায়। বৃষ্টি চায়। ভীষণরকম ঢেউ চায়। বোঝো?”
সে আলতো চেয়ে বলেছিল,
- “আমি তোমায় বুঝি।”
সে চৈত্রে ঝড় উঠেছিল। নদীতে জল ভেঙে পড়েছিল। গাছের ডাল ভেঙে পড়েছিল নদীর পাড়েই। সেই ভাঙচুড়ের মাঝে ভালোবাসা-বাসির কথা শোনা হয় নি কারোরই। ❤

চতুর্থবারের জন্য দেখা হয়েছিল রাস্তার মোড়েই। কলেজ পাশ করা সদ্য বেকার তখন। আমার দুটো টিউশন, হাত খরচের।
হাতে পেন, মাথা নামিয়ে হাঁটছিলাম ফুটপাত ধরে। সে হঠাৎ রাস্তার মাঝখানে পথ আটকে দাঁড়িয়ে,
- “ভালো আছো?”
আমি মাথা নাড়ালাম বরাবরের মতোই।
সে রাস্তা ছেড়ে, পাশে সরে দাঁড়িয়ে বলছিল,
- “বেশ।”
আমি তাকে পেছনে ফেলে হাঁটলাম। দু 'পা এগিয়ে ভাবছিলাম অনেকটা রাস্তা এগিয়েছি। ঠিক এমনি সময় পেছন থেকে তার গলা,
- “এখন তুমি খোঁপা করো?!”
আমি পেছন ফিরে চাওয়ার আগেই, ঝাপসা হয়ে বৃষ্টি নামল। দৌড়ে এলাম পথটুকু। ঝড়ের ঝাপটায় খোঁপা তখন আলগা, চুলের থোকা নেমে গেছে কোমড় ছাড়িয়ে। ❤

আজ তার সাথে আমার শেষবারের দেখা। স্টেশন চত্বরে। ভীষণ ঝড়ে আটকে পড়েছে ট্রেন। প্ল্যাটফর্ম চত্বরে আটকে মানুষের ব্যস্ততা।
তোমার হাতে বড়ো ট্রলিব্যাগ -ব্রিজ থেকে নেমে আসছো, মাথা উঁচু, শিরদাঁড়া সোজা।
সিঁড়ির শেষধাপে পা রেখে থমকে বললে,
- “ট্রেন বন্ধ?”
আমি ট্রলিব্যাগের দিকে তাকিয়ে বললেম,
- “তার ছিঁড়েছে পরের স্টেশনে।”
তুমি আমার দিকে তাকিয়ে বললে,
- “পুনে চললাম। আমার জীবনের তার জোড়া দিতে। চাকরিটা হল শেষমেষ।”
আমি নির্লজ্জের মতন বলে উঠলেম,
- “সত্যিই সব জুড়লে? ছিঁড়ল না কিছু? জট পাকালো না?”
আরো জোরে বৃষ্টি নেমেছে। হাওয়ার দাপটে শাড়ির আঁচল এলোমেলো, কাদা ছিটকে লেগেছে শাড়ির পাড়ে। আমি পেছন ফিরতেই তার গলা কানে এল,
- “আমি একদিন ফিরব। তাই আজ যাচ্ছি।”
আমি মুখ ফিরিয়েছিলাম তাকে চলে যেতে দেখব বলে। দেখতে পাই নি।
প্ল্যাটফর্মের টিনের চাল ভেঙে পড়েছে তার আর আমার মাঝ বরাবর। সবাই ব্যস্ত হয় পড়েছে ছুটোছুটিতে।
সে বোধহয় হেঁটে গেছে অনেকক্ষণ। ❤

আমি ভাঙা টিনের চালের দিকে তাকিয়ে বললেম,
- “অনিমেষ, তুমি বরং ঝড় হয়েই ফিরে এসো।” ❤

   
“কিছু মানুষ জীবন থেকে হারিয়ে গেলেও, থেকে যায় ফেসবুকের সার্চে, হোয়াটসঅ্যাপের স্ট্যাটাসে ও লাস্ট সিনে..। থেকে যায় পুরোনো ক্যালেন্ডারের কয়েকটা তারিখে..। রয়ে যায় কোন কবিতায়, গানে অথবা কোনো সিনেমার বিশেষ দৃশ্যে..। কেননা রাতের সব তারারাই লুকিয়ে থাকে দিনের আলোর গভীরে...!!”
_____________________

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.